ইসলাম
ইসলাম (, ) একটি একেশ্বরবাদী ইব্রাহিমীয় ধর্মবিশ্বাস যা কুরআন এবং মুহাম্মাদের শিক্ষা ও দিকনির্দেশনার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের অনুসারীদের মুসলিম বলা হয়। বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনসংখ্যা আনুমানিক ২০০ কোটির কাছাকাছি, যা খ্রিস্টানদের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী।মুসলিমদের বিশ্বাস, ইসলাম একটি প্রাচীন এবং চিরন্তন ধর্মের পরিপূর্ণ ও সার্বজনীন রূপ, যা মানবজাতির শুরু থেকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবি ও রাসুলের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসকল নবির মধ্যে রয়েছেন আদম, নুহ, ইব্রাহিম, মুসা এবং ইসা। মুসলিমদের মতে, কুরআন আল্লাহর সরাসরি বাণী এবং এটি তার চূড়ান্ত ও অবিকৃত প্রকাশ। এই ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি তারা পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থগুলোকেও স্বীকৃতি দেন, যেমন তাওরাত, যাবুর ও ইনযিল। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে মুহাম্মাদ আল্লাহর সর্বশেষ নবি, যার মাধ্যমে আল্লাহর বার্তাবাহক প্রথার সমাপ্তি ঘটে এবং ইসলামের ধর্মীয় পরিপূর্ণতা সম্পন্ন হয়। তার জীবনাচরণ ও শিক্ষাকে ''সুন্নাহ'' বলা হয়, যা ''হাদিস'' নামে পরিচিত বিবরণে সংরক্ষিত আছে। এই সুন্নাহ মুসলিম জীবনে নৈতিক ও সামাজিক আচরণের আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামের কেন্দ্রীয় বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ব ও অনন্যত্ব, যাকে ''তাওহিদ'' বলা হয়। একইসাথে মুসলিমরা আখিরাত বা পরকালে বিশ্বাস করেন, যেখানে কিয়ামতের দিনে ন্যায়বিচার হবে এবং প্রত্যেক মানুষ তার কর্ম অনুযায়ী জান্নাত বা জাহান্নামের প্রতিফল পাবে। ইসলামি জীবনব্যবস্থা আল্লাহর ইবাদতের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো "পঞ্চস্তম্ভ"। এগুলোর মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ প্রকাশ করেন। এসবের মধ্যে আছে ইমানের ঘোষণা, নামাজ, যাকাত, রমজানের রোজা ও হজ। শরিয়াহ বা ইসলামি আইন মুসলিম জীবনের সর্বাঙ্গীন দিককে প্রভাবিত করে। ব্যক্তিগত আচরণ, পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশ সব কিছুর মধ্যেই এর প্রয়োগ রয়েছে। মুসলিমদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর, যা রমজান শেষে উদযাপিত হয় এবং ঈদুল আযহা, যা কুরবানি উপলক্ষে পালন করা হয়। ইসলামের তিনটি পবিত্রতম স্থান হলো মক্কার মসজিদে হারাম, মদিনার মসজিদে নববি এবং জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদ, যা মুসলিমদের ধর্মীয় জীবনে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন ঘটে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে, যখন মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী মুহাম্মাদ প্রথমবারের মতো আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি লাভ করেন। তার নবুয়তের সময়ে এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত আরব উপদ্বীপের বৃহৎ অংশ ইসলাম গ্রহণ করে একটি ঐক্যবদ্ধ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর, খিলাফতে রাশিদার অধীনে ইসলামি শাসন আরবের সীমানা ছাড়িয়ে প্রসার লাভ করে। পরে উমাইয়া খিলাফতের সময় ইসলামি সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয় পশ্চিমে স্পেনের ইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে পূর্বে সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত, যা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে। আব্বাসীয় খিলাফতের আমলে, বিশেষত ইসলামের স্বর্ণযুগে, মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প ও অর্থনীতিতে অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়। এই সময়ে বাগদাদ, কায়রো ও কর্ডোভার মতো নগরীগুলো বিশ্বজুড়ে বিদ্যা, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ইসলামের বিস্তার ছিল বহুমুখী। সামরিক বিজয়, সাম্রাজ্য বিস্তার ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ধর্মীয় আহ্বান (''দাওয়াহ''), শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমেও ইসলাম নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
ইসলামের দুটি প্রধান শাখা হলো সুন্নি ইসলাম এবং শিয়া ইসলাম। বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের মধ্যে প্রায় ৮৭ থেকে ৯০ শতাংশ সুন্নি এবং প্রায় ১০ থেকে ১৩ শতাংশ শিয়া। এই বিভাজনের সূচনা ঘটে মুহাম্মাদের উত্তরসূরি নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধ থেকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পার্থক্য ধর্মতত্ত্ব ও আইনতত্ত্বসহ আরও বিস্তৃত মাত্রায় রূপ লাভ করে। সুন্নি মুসলিমদের প্রামাণ্য হাদিস সংগ্রহ ছয়টি বই নিয়ে গঠিত, যাদেরকে ''সিহাহ সিত্তাহ'' বলা হয়। অন্যদিকে শিয়া মুসলিমদের প্রামাণ্য হাদীস সংগ্রহ চারটি বই নিয়ে গঠিত, যেগুলো শিয়া চিন্তাধারার মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৪৯টি দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করছেন। বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ায় বাস করেন, যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে সর্বাধিক জনবহুল। প্রায় ৩১ শতাংশ মুসলমান দক্ষিণ এশিয়ায়, ২০ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় এবং ১৫ শতাংশ সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় বাস করেন। এছাড়াও মুসলিম সম্প্রদায়ের উপস্থিতি রয়েছে আমেরিকা, চীন ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। পিউ রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, মুসলিমরা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী। উইকিপিডিয়া দ্বারা উপলব্ধ